
বিনোদন প্রতিবেদক :
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এ আসছে মনির মুন্না’র উপন্যাস “ফড়িংয়ের পিঠে মৃত্যু”। বইটি প্রকাশ করছে পরিবার পাবলিকেশন্স। এ বইটি পাওয়া যাবে বইমেলার পরিবার পাবলিকেশনসের (২১৩ নং) স্টলে।
লেখকের নিজের ভাষায়, “ফড়িংয়ের পিঠে মৃত্যু”—মূলত উত্তর অঞ্চলের একটি জেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা উপন্যাস।
যেখানে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস, আচার – আচরণ, জীবন যাপন, বিনোদনের মাধ্যম, সংস্কার – কুসংস্কার, খাবার দাবার সহ বিভিন্ন দিক ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।
উপন্যাসটা শেষ করে কারো কারো মনে উত্তর অঞ্চল সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হতে পারে। ভালো মন্দ মিলেই মানুষ, যেহেতু মানুষ অঞ্চল গঠনের প্রধান উপাদান তাই আমরা অঞ্চলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে মানুষকে বিবেচনায় রাখব। তবে একথা সত্যি, আমাকে যে ঘটনা গুলো সবচেয়ে বেশি তাড়িত করেছে সেগুলোর দিকে বেশি আলোকপাত করেছি। পাঠককে আরও একটি বিষয় জানাবার আগ্রহ বোধ করছি। কিছুদিন থেকে তাদের সাথে মিশে এতটুকু বুঝতে পেরেছি উত্তর অঞ্চলের মানুষজন ভীষন রকম আতিথেয়তা পরায়ন।
যদিও লোহা লক্কড়, ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইটের অবদানে আমরা আমাদের সময়কে ব্যস্ততার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি, তথাপি এখনো কিছু মানুষ আছে যারা এখনো অপরিচিত কাউকে দেখলে নিজে ডেকে খোঁজ নেয়, বিপদে সহযোগিতা করে। প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয়। এখানে আসার পর মনে হয়েছে, এখনো মানুষের মধ্যে থেকে সব ভালো গুন, সব সরলতা, সব সৌহার্দ্য উঠে যায়নি।

প্রিয় পাঠকদের জন্য উপন্যাসটির কিয়দাংশ নীচে দেয়া হলো—
হাঁটত গেছনু, ভাবনু বাজার হাট কি করো না করো ত্যাই, দুই সের আলু, পুল্লা, ঝাল, তেল আর পাঙ্গাশের মাছ এ্যানিছি, রান্দো দিনি খিদা ল্যাগিছে।
আর বাজার, জঙ্গল এ্যাছলো জন্যে ব্যাঁচ্যা আছি। তানতে ম্যাটিয়্যে খ্যায়্যা লিলোনি। ছয় মাস তো হলো, কুনু উন্নতি বুজিত্তি না। আর কদ্দিন ঠিক হব্যে?
ঠিক হবার পারে নাও পারে, তাই বুল্যা সারা দিন রুগী রুগী করলে হব্যে। ঝোলাত সুটা আছে কাপড় গুলান খ্যাচো দিনি, মাতাডা ঘুষ্যা এনা ভালো কর্যা ডুব দ্যেও। লিজেক আজাব দিয়া কি লাভ হব্যে। তার থিনি এ্যানা পয় – পরিষ্কার হয়্যা ফুলফুল্যা হয়্যা থাকো মুনডাও ভালো ল্যাগবেনি।
মজিদ চোখ বুজে পড়ে আছে, বাজারের ব্যাগ হাতে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে আমেনা, পিছু পিছু মাস্টার। ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর চোখ মেলল মজিদ। ফস করে একদলা নিঃশ্বাস ছেড়ে চালের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ওদিক থেকে কথার গুনগুন শব্দ ভেসে আসছে। থেকে থেকে হাসির শব্দ। বহুদিন আমেনার মুখে হাসি দেখেনি মজিদ। আজ আমেনা হাসছে। মজিদ দেখতে পাচ্ছে না। কি ভেবে এক চির বাঁকা হাসি খেলে গেলো মজিদের ঠোঁটে। আবার চোখ বুজলো।
এ্যানা পুল্লাও দেও, পুল্লা আংচায়া ঝুল করলে একের লাগে।
বাতির আলোয় কাটাকুটি করছে আমেনা। পাশে বসে আছে মাস্টার, এটা ওটা বলছে এগিয়ে দিচ্ছে।
সুদা মুখ কর্যা বসা থ্যাকপে? বিক্যালে সবরী নামাছুনু, ঝাকাডা টান দিয়া ল্যাও, চাবাও আর গপ্পো করো।
কথাটা মজিদের কানে এলো।
খ্যালি সবরী খাবার প্যারি না। গুটা চ্যারেক জিরা, কাচা ঝাল ব্যাট্যা তেল, নুন, হলুদ এগাস্তর কর্যা দিলে টুকা দিয়া খামুনি।
হাতের কাজ ফেলে পাটায় কাচা মরিচ আর জিরা বাটছে আমেনা।
খসর খসর শব্দ কানে আসছে মজিদের।
বিকেলে পেয়ারা নামানোর পর আমেনাকে বলেছিল কাচা মরিচ, জিরা বেঁটে হলুদ, লবন তেল মিশিয়ে দিতে, বিরক্ত হয়েছিল আমেনা।
মজিদ মনে মনে ভাবছে, বাঁটছে যখন তখন ওর জন্যও বাঁটবে। হোক রাত তাও স্বাদ করে পেয়ারা খাওয়া হবে। চোখ মেলে রাখল মজিদ। পাটার শব্দ থামল, হাসির শব্দ কানে আসছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল মজিদ, আমেনা এলোনা। অপেক্ষা করতে করেতে আবার চোখ বুজলো মজিদ।