
পগর মাহমুদ সাগর ঃ
স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। গত বছরের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবির গ্রুপের মধ্যে পাল্টা পাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। সংঘর্ষে দুই গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়। দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে।
সংঘর্ষের দুই দিন পর উপজেলার ঝুমুর সিনেমা হলের সামনে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষকে দ্রুত ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি আর এলাকায় আসেননি। তবে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ ১০ মাস এলাকায় না থাকলেও গত ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় যোগ দেন। তার অনুপুস্থিতির কারণে শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার উন্নয়ন কাজে ভাটা ও প্রশাসনিক কাজে স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্ন উঠে। দুই উপজেলায় কয়েক শত অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসাবে তার নাম থাকলেও তিনি কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এমপির অনুপস্থিতিতে তার সমর্থকরা মুন্সীগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ঢাকায় বসে এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাদের দাবি, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়েই এলাকায় ফিরবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ছাড়াও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও একই কলেজের ছাত্রসংসদের ভিপি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রেসিডেন্ট নুরুল আলম চৌধুরী, সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক এবং মেট্রো বাংলা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের পরিচালক মাকসুদ আলম ডাবলু।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নমিনেশন প্রাপ্তিতে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। জয়ের ব্যাপারে কঠিন কোন সমস্যা হবে না। তিনি এলাকায় কাজ করে ব্যাপক সাড়া জাগানোই এলাকার ভোটাররা তাকে পছন্দ করছেন এবং ভোটও নৌকা মার্কাকেই দেবেন। বড় দল, তাই নমিনেশন যে কেউ চাইতেই পারে। বি.চৌধুরী ও শাহমোয়াজ্জেম হোসেনের অতীতের কর্মকা- বিবেচনায় তাদের এলাকার ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রার্থী অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু ১৯৭৮ সালে ওবায়দুল কাদের-বাহালুল মজনুন চুন্নু দ্বারা গঠিত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। এবারই তিনি প্রথম প্রার্থী তালিকায় এসেছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে দলীয় নমিনেশন দেবেন-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে এই চিকিৎসক প্রার্থী বলেন, নৌকার জয় মানে তার জয় নয়-এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জয়, এই দেশের জয়, এই মাটির জয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জয়-জননেত্রী শেখ হাসিনার এই বার্তা নিয়ে তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন বলে জানান।
প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মালখানগর ইউনিয়নের পাঁচবার চেয়ারম্যান ছিলেন। একজন পোড়খাওয়া নেতা হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি। সিরাজদিখান উপজেলা থেকে তিনি এইবার একমাত্র প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।
তিনি জানালেন, সিরাজদিখানে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শক্তহাতে ধরে রেখেছেন। দুই টার্ম জনগণ তাকে ভোট দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। ১৯৭০ সালে জামালউদ্দিনের পর সিরাজদিখান থেকে আর কেউ এমপি নির্বাচিত হয়নি। তিনি দীর্ঘ বছর ধরে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে আসছেন। সিরাজদিখানের সন্তান হিসেবে এইবার তিনি সিরাজদিখান থেকে দলীয় নমিনেশন চাচ্ছেন। নৌকা পেলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ের আশা করছেন।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার কবীর প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করার পর থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ গ্রুপের সঙ্গে তার সমর্থকদের কয়েকদফা সংঘর্ষ, মামলা ও ছাত্রলীগের একাধিক কমিটি হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গোলাম সারোয়ার কবির মনে করেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে নমিনেশন দেবেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে তৃণমূলে গড়ে উঠা তিনি একজন কর্মী। তিনি এলাকার মানুষের ও জনগণের নেতা বা সেবক হতে চান। দলীয় নমিনেশন পেলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলে তিনি দাবি করেন।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সি.আই.পি ব্যবসায়ী প্রার্থী নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৮ সালের দু:সময়ের এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। কাজেই দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন বলে নুরুল আলম চৌধুরীর বিশ্বাস।
শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কোলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নেছারউল্লাহ সুজন বলেছেন, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা বা ব্যক্তি। সংগঠনের মূল নেতৃত্ব তার সঙ্গে রয়েছে। এই আসনে যারা নির্বাচন করতে চাইছে, তারা নির্বাচন করার মতো গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। তারা সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ব্যাপক উন্নয়নকে ঢাকতে চাইছেন এবং ব্যক্তিগত বিরোধীতা করে তার অবস্থান নড়েবড়ে করার চেষ্টা করছেন।