
নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছীতে ছোট যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাংচুর করেছে। বুধবার উপজেলার পারসোমবাড়ী বাজারের ব্রীজের পশ্চিম পাশে নদীতে বালু উত্তোলনের স্থানে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে দৌলতপুর গ্রামে বালু উত্তোলন চলমান আছে। এলাকাবাসীরা ফসলি জমি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার পারসোমবাড়ী বাজারে ব্রীজের পশ্চিম পাশে এবং দৌলতপুর গ্রামে ছোট যমুনা নদীতে থেকে ‘মেসার্স তরফদার ট্রেডার্স’ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ দুটি স্থানে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর করা হয়েছে। পারসোমবাড়ী বাজারে ব্রীজের পশ্চিম পাশে প্রায় ২শ গজ দূরে ছোট যমুনা নদীর চর থেকে ফসলি জমির প্রায় ৫ ফুট দূরে ১৫/২০ ফুট গভীর করে স্ক্যাবিটর মেশিন দিয়ে বালু মাটি কাটা হয়েছে।
অথচ উপরের ফসলি জমিতে মাচা করে সীমসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ আছে। আগামী বন্যায় এসব জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে। জমির কাছ থেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করা হলেও জোর পূর্বক বালু উত্তোলন করা হয়েছে। আবার উল্টো বালু উত্তোলনকারীরা কৃষকদের মামলা হামলা করার ভয় দেখানো হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে জমি রক্ষায় কৃষকরা জোটবদ্ধ হয়ে পারসোমবাড়ীতে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পাইব, নলকুপ ও টিনের বেড়া ভাঙচুর করেছেন। তবে দৌলতপুর গ্রামে বালু উত্তোলন চলমান আছে। এসব বালু বহনের কাজে ট্রাক্টর আসা-যাওয়ার জন্য বাঁধের রাস্তা কাটা হয়েছে। ট্রাক্টরে প্রয়োজনীয় তুলনায় অতিরিক্ত বালু বহন করা বাঁধের রাস্তা ও পাঁকারাস্তা নষ্ট হচ্ছে।

উপজেলার চকগোপাল গ্রামের ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ বলেন, পারসোমবাড়ীতে ব্রীজের পাশে যেখান থেকে বালু তোলা হয়েছে সরকার আমাকে ৯৯ বছরের জন্য ওই ৩৪ শতক জমি লীজ দিয়েছে। সেখানে সরকার থেকে আমাকে বাড়ী তৈরী করে দিবে। ইতোমধ্যে ওই জায়গাটি জরিপও করা হয়েছে। অথচ তারা নদী বাদ দিয়ে সরকার আমাকে যে জায়গাটি দিয়েছে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে আমার জমিটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফসলি জমিও হুমকির মধ্যে আছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমাদের সামান্য জমি। জমিতে ফসল করে সারা বছর ভরন পোষন চলে। এখন ফসলি জমির পাশ থেকে যদি এভাবে বালু তোলা হয়, তাহলে আগামী বছর নদীতে পানি আসলে জমি ভেঙে নদীর মধ্যে বিলিন হয়ে যাবে। তখন আমরা খাব কি?
দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নদীর উপরে ৫৮ শতক ফসলি জমিতে সবজি লাগানো আছে। গত দুই মাস থেকে নদী থেকে ২০/২৫ ফুট গভীর করে জোর পূর্বক বালু উত্তোলন করছেন মাখন, শেখর, মাসুদ, নাসির ও বাচ্চুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। বার বার তাদের নিষেধ করা হয়েছে। উল্টো তারা মামলা করার ভয় দেখায়। প্রশাসনকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
কটকবাড়ী গ্রামের আসিক হোসেন বলেন, বাঁধের রাস্তা কেটে ট্রাক্টর চলাচলের জন্য রাস্তা করা হয়েছে। ট্রাক্টরে করে অতিরিক্ত বালু বহন করায় বাঁধের রাস্তার বেহাল হয়ে যাচ্ছে।

তাজপুর গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ শরিফ উদ্দিন বলেন, গত ৪০ বছর দৌলতপুর গ্রামের এ ছোট যমুনা নদী ছিলনা। প্রতি বছর বন্যার কারণে ফসলি জমি ভাঙতে ভাঙতে এ নদী হয়ে গেছে। ফসলি জমিগুলো এখন নদী। আর এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালু উত্তোলনকারী শহিদুল ইসলাম ও শেখর বলেন, আমরা এক বছরের জন্য ‘মেসার্স তরফদার ট্রেডার্স’ থেকে পারসোমবাড়ী ও দৌলতপুর বালু মহল সাবলিজ নিয়েছি। এখানে বৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কারো কোন ফসলি জমির ক্ষতি হবে না। এছাড়া কাউকে মামলা করার হুমকিও দেয়া হয়নি। বরং এলাকাবাসী আমাদের বালু উত্তোলনের সংরঞ্জাম ভাঙচুর করেছে।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মাসুম আলী বেগ বলেন, পারসোমবাড়ী বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সাথে দ্বন্দের এক পর্যায়ে ওই স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু লীজ প্রক্রিয়ায় তারা বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের আগ পর্যন্ত ওই স্থানে বালু উত্তোলন আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।