প্রেমের ফাঁদে পড়ে আইএস-বধূ, অতঃপর… আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ মে ২, ২০১৭মে ২, ২০১৭0 স্টাফ রিপোর্টারঃ মেয়েটির নাম ইসলাম মিতাত। বাড়ি মরক্কোয়। কয়েক বছর আগে একটি ডেটিং সাইটের মাধ্যমে পরিচয় হয় আফগান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আহমেদ খলিলের সঙ্গে। একসময় তাঁরা বিয়ে করেন। এরপর বদলে যায় মেয়েটির জীবন। স্বামীর হাত ধরে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আস্তানায় চলে যান মেয়েটি। তিন আইএস যোদ্ধার স্ত্রী আর দুই সন্তানের মা হয়ে সেই আস্তানা থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। এখন আছেন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দিদের একটি আশ্রয় শিবিরে, সিরিয়ায়। প্রেমের ফাঁদে পড়ে আইএস-বধূ হওয়া এবং সেখান থেকে মুক্তির গল্প তিনি শুনিয়েছেন সিএনএনকে। প্রেম থেকে বিয়ে সম্পর্কে মিতাত বলেন, মুসলিমা ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খলিলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ব্রিটিশ জানার পর খলিলের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ হয়। কারণ, তিনি নিজে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ব্রিটিশ কাউকে বিয়ে করলে তাঁর স্বপ্নপূরণ সহজ হবে। খলিলের তরফ থেকেও তাঁকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। সব মিলিয়ে দুজনের মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কয়েক মাস পর খলিল তাঁর বোন পরিচয় দিয়ে এক নারীকে নিয়ে মরক্কোয় তাঁদের বাড়ি যান। বিয়ের প্রস্তাব দেন। কতটা সচ্ছল, তা প্রমাণের জন্য তাঁরা ব্যাংক হিসাবও নিয়ে যান। এরপর বিয়েটা হয়ে যায়। বিয়ের পর দুবাই হয়ে আফগানিস্তানের জালালাবাদে যান তাঁরা। সেখানে মাস খানেক থাকার পর নিরাপত্তার কারণে মরক্কোতে ফিরে যান মিতাত। এরপর খলিল দুবাই থেকে মিতাতকে ফোন করে জানান, তুরস্কে একটি চাকরি মিলেছে তাঁর। তাঁরা তাই সেখানে চলে যাবেন; একসঙ্গে ছুটি কাটাবেন, অনেক ঘোরাঘুরি করবেন। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে মিতাত যাত্রা করেন তুরস্কে। সেখানে পৌঁছানোর পর খলিল তাঁকে নিয়ে কোনো রিসোর্ট বা হোটেলে ওঠেননি, সরাসরি চলে যান সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ এলাকায়। মিতাতের ভাষায়, ‘যে বাড়িতে গেলাম, সেটা নারী-পুরুষ আর শিশুতে গিজগিজ করছিল। একটা ঘরে পুরুষেরা, আরেকটা ঘরে নারী ও শিশুরা। আমি খুব হতবাক হয়ে পড়ি। জানতে চাই, আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে তাঁরা বলেন যে তাঁরা হিজরতে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি খলিলের কাছে জানতে চাইলাম। এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলাম। শুনে সে ভীষণ খেপে গেল। বলল, তুমি আমার স্ত্রী। তোমাকে আমার সব কথা মানতে হবে।’ তিনি ভেবেছিলেন, সীমান্তে তুরস্কের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাবেন। তবে সীমান্তে পৌঁছানোর পর তাঁদের বহরকে দেখে গুলি চালানো হয়। প্রাণ বাঁচাতে অন্যদের মতো তিনিও সিরিয়ায় ঢুকে পড়েন। সিরিয়ার দিনগুলো প্রসঙ্গে মিতাত বলেন, সিরিয়ায় গিয়ে তাঁরা জারাব্লুস শহরের কাছাকাছি একটি আস্তানায় ওঠেন। সেখানে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, তিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া ও সৌদি আরব থেকে আসা লোকজন ছিল। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন আর তাঁর স্বামীকে এক মাসের সশস্ত্র প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে খলিলকে যুদ্ধে পাঠায় আইএস। প্রথম দিনই কোবানিতে লড়াইয়ে মারা যান খলিল। খলিলের যে ভাই আইএসে যোগ দিয়ে পরিবারসহ সিরিয়ায় ছিলেন, তিনিও লড়াইয়ে মারা যান। অথই সাগরে পড়েন তিনি। তবে পালানোর পথ ছিল না। ওই আস্তানাতেই সন্তান আবদুল্লাহর জন্ম হয়। আইএসের লোকজন আবার বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে মিতাতকে। একসময় প্রথম স্বামী খলিলের বন্ধু জার্মানির আবু তালহা আল-আলামিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তালহা তাঁকে আলেপ্পোর মানবিজে নিয়ে যান। তবে তিনি তাঁকে কড়া শাসনে রাখতেন, বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না। তাঁকে তালাক দেন মিতাত। ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি, তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি। তাঁর ভাষ্য, এ কাজে কেউ সহায়তা করতে চান না। কারণ, ধরা পড়লেই শিরশ্ছেদ করা হয়। তৃতীয়বারের মতো মিতাতকে বিয়ে দেওয়া হয় আবু আবদুল্লাহ আল-আফগানি নামের এক আইএস যোদ্ধার সঙ্গে। মিতাতের ভাষায়, আবু আবদুল্লাহ ভারতীয়। তাঁর মা অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সে সূত্রে সম্ভবত তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ছিলেন। এই সংসারে মারিয়া নামের একটি মেয়ে আছে। তবে লড়াই করতে গিয়ে মারা যান তৃতীয় স্বামীও। পালানোর সুযোগ চলে আসে মিতাতের কাছে। পাচারকারীদের অর্থ দিয়ে সন্তানদের নিয়ে তিনি কুর্দিদের তল্লাশিচৌকিতে পৌঁছে যান। দুই বছরের আবদুল্লাহ ও ১০ মাসের মারিয়াকেসহ মিতাতকে সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়। এটি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। সন্তানদের নিয়ে মিতাত এখন সেখানেই আছেন। তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে লেবাননের বৈরুতে মরক্কো দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি। মিতাতের বাবা আশা করছেন, মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ তাঁর মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তবে দেশে ফেরার চেয়ে সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে মিতাত বেশি চিন্তিত। তাঁর আশা, প্রথম সন্তানের বাবা ব্রিটিশ হওয়ায় তাঁরা ব্রিটিশ পাসপোর্ট পেতে পারেন। কিংবা তৃতীয় স্বামীর পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়ও থাকতে পারেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত কোথায় ঠাঁই হবে, তা নিয়ে চিন্তিত মিতাত। বললেন, ‘আমি জানি না আমি কোথায় যাব। আমি কিছু জানি না। আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে।’ সূত্রঃ সিএনএন Related Share on Facebook Share 0 Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share 0 Share on LinkedIn Share Share on Digg Share Print Print 0 Total Shares করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যেকোনো পরামর্শ বা উপদেশের জন্য উল্লেখিত হটলাইনে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে : ৩৩৩, ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ০১৪০১১৮৪৫৫১; ০১৪০১১৮৪৫৫৪; ০১৪০১১৮৪৫৫৫; ০১৪০১১৮৪৫৫৬; ০১৪০১১৮৪৫৫৯; ০১৪০১১৮৪৫৬০; ০১৪০১১৮৪৫৬৮; ০১৯২৭৭১১৭৮৫; ০১৯৩৭০০০০১১; ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯৩৭১০০১১।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন নম্বর হচ্ছে-১৬২৬৩।এ ছাড়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ই-মেইল বার্তা পাঠানো যাবে। ফেসবুক আইডি: Iedcr, COVID-19 Control Room, e-mail : iedcrcovid19@gmail.com